সনেট ১
পরাবাস্তব ফেরিওয়ালা
——————————–
বহতা নদীর মত চলে গেছো তুমি
কেরাই এর নাউ;গুনবহা খালের
স্লুইচ গেটের উপর দাড়িয়ে থেকে
তেউলা টাকির কান্না মানিব্যাগে পুরে
প্যাট্রোল পুড়ে চলে যায় লালের গ্যাদা
কসমোপলিটন শহরের ওই দিকে
যেখানে সেখানে প্রিয়তম কাল্লাস
কেবল সহনশীল ঝগড়া প্রবণ
পাথরের মনে ;মানুষ প্রমান করে
এই যে আমি বেঁচে আছি জীবন নিয়ে।
তুমিও অমর হতে চেয়ে ছিলে; জন্য
সুখি হবে ভেবে লাল সবুজ পাথর-
হ’য়ে উঠি। পরাবাস্তব ফেরিওয়ালা
পিছু ডাকে ‘খোকা বাড়ি ফিরে আয় বাবা’।
সনেট ২
সুখের প্রজাপতি
——————-
আকাশে মেঘ বৃষ্টি হলে হতে পারে
মোরগের গলা শোনা যাবে হলে ভোর
বিছানা বালিশ এলোমেলো থাকে খাটে
তুমুল তুফানে মাঝি নাও নিয়ে ফেরে
গ্রামের রাখাল ছুটে যায় মেঠ পথে
সবল শরীর থামে তার অপঘাতে
পাখিদের ঘুম কভু ভাঙে বজ্রপাতে
আকাশের রং মেঘে হয়েছে ম্লান
কৃষকের হাত তবু বুনে যাবে ধান
থরে থরে ভরা অই ফরসা উঠান
নববধু সলাজ নাইওরেতে যাবে
গাছে গাছে ফল নদী কালো জল
অপরূপ সুখের প্রজাপতি যুগল
উড়িছে আকাশে মধুর সন্তরণে।
সনেট -৩
বিশ্ব কাপে থরথর
—————————-
নিকুঞ্জে নিঃসঙ্গ ভালো লাগে নাতো আর
নৈসর্গিক দৌরাত্মা বুক করছে ভার
চাঁদ তারা সূর্য দেখি দেয়ালের চোখ
সৃজনশীলতায় কিছু লাগে সঙ্গত
উপযোগ এইসব নেটে আর বেডে
মুক্ত অভিসারীর মন গতীর জীবনে
ছিন্ন করে পথ আজ পথের রতন
ভালোবাসা পাপড়ি ঝরে পড়ে যমন
আপনই-পর, পর তো অবিনশ্বর
ঘর, মানুষ অবিকল তার ভেতর
ধরা ছোঁয়া শোনা ও বলা যাবে না কথা
যার যার মত এখন থাকো একেলা
নির্মম নিরবতায় দুরে নারী নর
করোনা যাতনা বিষে বিশ্ব থরথর।
সনেট -৪
চতুর্দশপদি
——————-
মেসোপোটেমিয়ার কিলকলিপি দিয়ে
ছবি একেঁ তোমাকে শোনাবো সৈন্যদের
যুদ্ধ বিজয়ের গল্প; তুমিতো শুনেই-
ভুলে যাও পাথর কেটে তৈরী সভ্যতা।
একদিন মুক্ত ছিলো বরষার জল
আপতিত কুমকুম মেঘের অতলে
তরল,গরল ছিলো বলে দাবি করে।
একদল ঘোষণা করে দূরে থাকতে
অন্য দলও কাছে আসতে শুরু করে
এইভাবে শুরু হয় যত কোলাহল
গন্ধমের চাষ করে খায় অবিরল।
ভাবের অভাব যেথা, তথা চির দুখি
এইভাবে লিখলাম চতুর্দশপদি।
সনেট-৫
পদতল করতল
————————–
দেখিলাম, আছে, সত্য, প্রমাণের নহে
ঘাটে আসা যাওয়া নিত্য জলজ তটে
সফিকুল ভাবে আর ঘুম চোখে হাটে
যুক্তির চেয়ে বিশ্বাস খুঁজে পায় টাকা
বনতরুর ধার ধরেই শিয়ালেরা
তামাটে চাদর গায়ে দিয়ে হাটিতেছে
যেমন; কেউ কেউ একা বোকা চলে
পথে প্রণদনা পেয়ে যায় ভ্রকুটিতে
আত্বপ্রসারণের সমগ্র ব্যাকুলতা
লিপিকর;/দুই গাল চাটে নিরুপম
স্বরূপলক্ষণ তার শাবকের দল
স্ফুটতর চিন্তা গুলো ফেরে বারবার
স্বর্গ নরক ঘুরে ; ব্রাহ্মান্ড অধ্যক্ষ
আপনার পদতল করতলে রাখে।
সনেট- ৬
দিনে কদম ফোটে না
——————————-
আমিও নাই তুমিও নাই ভালোবাসা
আছে আগের জাগাতেই-ছিল যেখানে
দিনে কদম ফোটে না ফোটে অন্ধকারে
রাঙা মুখটি তাহার ঢাকে অনুলাজে।
নববধূ মুখ ঢাকে শাড়ির আঁচলে
দিনে কদম ফোটে না ; সরমিন্দা চোখে
হাসে পরাণ ভরে সে পাতার আড়ালে।
কুটুম পাখি বলেন, তুমি আছো পথে
কুটুম পাখি নেয় না আহার বিহার
দুই পাখনা মেলে উড়ে যায় গায়েবে।
তুমি আমি থাকলে আছি, না থাকিলে না
ভালোবাসা বিহনে তাই ভালো থাকা না।
তুমি আমি নিত্য ভালবাসার গুজব
এমন যুগল ঢের আছে। কি, অভাব?
সনেট-৭
টুটকা টাটকা ফল দেয়
———————-
রূপ জানে যেরূপ তাঁরা আপন চেনে
গমনাগমন করো সিমারেখা মেনে
যাকে তুমি ভাবো আপন খোলা আকাশ উদলা যবন; অফুরন্ত প্রাণশক্তি
পড়শি যমন উচাটন কটাক্ষতে।
এখন নয়তো সময় জেগে থাকার
হট্রগোলে; অন্তঃপুরে কাব্যসাধনার।
আধ্যাত্বিক পূর্ণতা লাভের চেষ্টা বৃথা
পরমাত্মাকে ছেড়ে দাও বাইরে রাখো
ঘরের ভেতরে ঘুমে থাকো অষ্টপ্রহর
সত্য নয় সদা সত্য মিথ্যা কি অকাট্য !
মানিবে যখন যাহা নিত্য উন্মোচন।
মন দিয়ে মনে রাখো গুরুর বচন –
রোগ শোকে টুটকা টাটকা ফল দেয়।
সনেট-৮
মনুমেন্টের হাসি
————————–
নওবতের সুর শুনে সেই মায়াবী
মনোরম অলকানন্দার পাড়ে বসে
ঘাম জুড়িয়ে তরতাজা হয়ে উঠেই
আপন মনে গান ধরে হো ও ও শাই
‘কেনো আপন পর এই জগৎ ভর’
তখনি নদীর ওপাড়ে বিদ্যুৎচ্ছটা
পূর্ব আকাশে মেঘের গুড়ুম গুড়ুম
অদূরে নারকেল গাছের ডালগুলো
বালিকার গোছা গোছা চুল উড়ছিল।
উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ
ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে টোংঘরে
এসে হাজির হয় মহান সফিকুল।
একটি ডাহুক এখানে কদিন খুব
সুর করে ডাকে ; ছানা পেতে রক্ত লাগে।
সনেট-৯
রত্নার সাইকেল
———————–
অনাহুত অতিথির মত সফিকুল
সুপারি গাছের চটির মাচার উপর বসে
তখন তন্দ্রা নীদ্রার মাঝামাঝি থেকে
একটা শক্ত হাতল খোঁজে ডানে-বামে।
রত্নার সাইকেল সেদিন রাজপথে
ঐতিহাসিক মনুমেন্ট হয়ে ওঠেছে
ইদানিং হাসি একটা রোগ হ’য়ে গেছে
মনুমেন্টের হাসি মুছে ফেলে ডাহুক
বাগানে ফুটেই থাকে বোগেনভিলিয়া
মনোরম নির্জন অলকানন্দ পাড়ে
নিকষ রাতে আপন মনে গান ধরে
‘কেন আপন পর এ জগত মাজার’
আসা যাওয়ার পথ মানবিক রথ
এইখানেই আমাদের স্মৃতি ভাস্কর।
সনেট-১০
ভাত ভাঙা মেসিন
——
জীবন একটা ভাত ভাঙার মেশিন
বলেছেন রাজাপুরের সিরাজ মিয়া
তিনি একজন বক্তা শ্রেণির মানুষ
হাট বাজার রেল স্টেশনে গানগেয়ে
গল্পবলে এলোমেলো লোক জড় করে
দাঁতে মাজন সর্প তাবিজ বিক্রি করে
তার কথাগুলো অসম্ভব মজাদার ;
লোকজন দাড়িয়ে তার কথা শুনতো
গল্প গান জাদুর মাঝপথে প্রসঙ্গ-
বদলে ঔষুধ তাবিজ মাজন বিক্রি
শুরু করলে দর্শক মধ্যে চঞ্চলতা-
দেখা দিতো; তখন জামা কিম্বা পাঞ্জাবি
উঁচু করে পেট দেখিয়ে বলতেন
বাড়িতে ছয়খান ভাত ভাঙা ম্যাশিন।
——
সনেট -১১
—-
সময়ের ভাবনা
———————————————–
হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কেউ ; আমারতো সংক্রমণের দ্বিধা – ডক্টর রাষ্ট বিশ্ব
বলেছে,’দুরে থাকো’ তবে ভালো থাকবে
কাছে এলে মরণ করোনা মহামারী।
আহারে মুখোশের ভেতরে যে মুখটা
লুকানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে
সভ্যতার অপরিণত তদ্ভব রূপ
বিশাল পাথরের নীচে চাপা পড়লে
সুরক্ষা পোশাকে আবৃত এই আমাকে
চিনলেন কি ভাবে বাড়িয়ে থাকা হাত
মানুষ! আমি মানুষ?সুরক্ষা পোশাকে।
জীবন পাওয়ার আশায় সুরক্ষিত
কনা তুই দেখলে নির্ঘাত লজ্জা পেতি
আমিই একদম লজ্জায় মরে যাচ্ছি।
সনেট – ১২
দুরত্ব কমে না
——
হাত মেলাতে পরছি না বন্ধুর হাতে
তোর কাছে যাবনা বলে পণ করেছি
সারাক্ষণ বেদনার নিবিড় দুরত্ব
উপরটা যখন ভেতরে ঢুকে যায়
ভেতর পোড়ায় সামষ্টিক পরিতাপে।
এই চোখ তুমি দেখবে না কোনো দিন।
রাস্তা সরল হলেই দুরত্ব কমে না।
পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন আগন্তুক।
বাতাসের দিকেহাত বাড়িয়ে দিলাম।
বাতাস আমার খুব বন্ধু ছিলো বলে
গাছ গুলো তাঁকে অবিশ্বাস করলো না।
এই মাটি বায়ু জল প্রাণের মেলায়
বাগানের পথধরে একা হেটে যাই
সাথে মেহগনি পাতার মচমচানি।
সনেট-১৩
——–
সালাম আব্দুস
——–
আমাদের দেখা হয় আজিজ মার্কেটে
কথা হয় হ্যালো হাই সেই থেকে চলে
গেটে তখন ছিল বৈশাখি লাইব্রেরি
সন্ধের আড্ডা ওখানে জমতো সবার
মধ্যমনি কবি বদরুল হায়দার।
আব্দুস সালাম খুব পরিচিত নাম
উল্টায়ে হয়ে গেলেন সালাম আব্দুস
ফকফইকা চামড়া গতরে তাহার
ছয় ফুট উচ্চতায় ছিপছিপে গড়ন।
ডটে আঁকেন চিত্র গতি অতি দুুর্বার
যে বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না সচরাচর
আমি তাহার বন্ধু জলতরঙ্গ দিনে
অগনিত স্মৃতি বোধ ভিড় করিতেছে
হল না সময়, যেতে,.. একটু দেরিতে।
সনেট-১৪
ফেরাতে পারিনা-১
———————————
আমারই কবিতার মতো হয়ে যাচ্ছে-
তোমার লেখা গুলি; যেহেতু তুমি একা বোতলে নিয়ে আসো হিমশীতল পানি
কিছু মনে কর না; সাদাপানি চলবে –
বলে, এই ক্ষুদ্র দূর্বলতা পুঁজি করে
অন্তমিলের চারলাইন নিয়ে লেখো
সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সম্পাদকীয়
গুজব, নারী শিশু ধর্ম অর্থ বাণিজ্যে
রমরমা থামবেল;অষাড় কুযুক্তি
এই সব লুফে নেয় বুফনের গাঁধা
জল ছল ছল খল বল পারাপারে
অভিযুক্ত অভিনেত্রীদ্বয় গরিবের
মুন্ডু শুধু লয় ;মানিক যুগল মগা
বিভূয়ে তলায় ; সরলের সমাধান।
——–
সনট-১৫
ফেরাতে পারি না-২
——-
শোভনের সীমারেখা হয়েছে হারাম
উদোরপিন্ডি যেথা বুধোর ঘাড়ে রেখে
দেশের যে করে বদনাম, সে গোলাম
মননের আর এক জঙ্গল আছেন
মনিকোঠায় বসতি বাহিনীর ভূত
নবাব পুত ; অবলা প্রসূতিভর্তিকা।
রোহিঙ্গা ; প্রচল আছে এরকম কথা
অধিনায়ক ছিলেন ঘুমের ভেতর
মুড়ী দিয়ে কাথা ; ঝুনুদিদি তোর কাছে
চোখ দিই জমা। তাহাদের ঘিরে আছে
গামা আলফা বেটা,রস রঙ্গ তামাশা
মা জেগে আছেন জেগে নেই মানবতা
তিব্র তিক্ষ্ম রাগ আগুফলোবিম্বিত
কলম কশাই! এই লেখা পড় তুমি
——————-
সনেট-১৬
————-
ফেরাতে পারি না-৩
————-
এই লেখা পড়ে তুমি বমি করে দাও
এই লেখা পড়ে তুমি গুজব খবরে
দিয়ে দাও কান, তা না হলে বুঝবেনা
ওই সকল গুজবে কি আছে বয়ান
মানুষ না হয়ে তুমি তৃণ লতা হও
এইসব অমর পরাবাস্তব চিন্তা
ইতিহাস বাজিয়ে, চলে যাও তো ল্যাঠা
আমি কিছু মনে করবো না,দূরে মরো
সবার সামনে থেকে দুরে চলে যাও
এক দিন যে পথে এসেছ ‘সেই পথ’
ব্লেড দিয়ে কেটে ছিড়ে রক্তরক্ত খেলা
অসহনীয় অমার্জনীয় পাপের
পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হও; মরো
মায়ের বুকে আর ফিরে এসো না।
সনেট -১৭
—————————————
আমি তুমি সে
——-
আমি তুমি সে তেলে আর জলে মিশে
একাকার কিসের বিষে ; আর একটা
কিছু আছে ; মানুষের মন তারে বলে
সেই মন যেন গাব গাছেরই মতন
সুলভে বিলায় তাঁর স্থূল বিবরণ ।
তুমি ওই পথে গেলে ঘোর আন্ধারে
শেকড়ে দেখিলে আসন দৈত্য অনড়।
তার মাথার চুল মেঘের হুলুস্থুল
দন্ত গুলো ঝিকিমিকি রতন যেমন।
একটিই চক্ষু আর দেখো নাই কিচ্ছু
মস্তক ঘুরিয়া তথা ভূতলে পতন।
আমি,’তুমি’ বলি যারে থাকে অন্তরালে
‘সে’ এসে জুড়ে বসেন; শোভন মুদ্রণ।
আমি তুমি সে-কে কে? জানো-গুরু দক্ষিণে।