সুফি কবিতা- দুনিয়া মামুন
ধূপ যে শেষ হয়
তুই যা ওরে মন বাতাসের মতো অদৃশ্য উড়ে
যেখানে থাকে তার হৃদয় কাছে অথবা দূরে
দেহ কি পারে ছুঁইতে মনের সেই শুদ্ধ ঠিকানা
অচিন্তে সে ঘুম সারে তার অবয়ব নেই জানা
তবু তুই তোর অস্থীর ভেতর পাবে সেই ঘ্রাণ
ধূপ যে শেষ হয় কার্ত্তিক ফিরে আসে অগ্রাণ
জানি না মর্মের ঠিকানা পড়ে আছি ক্ষীণকায়
দিন আসে মাস-বছর সবই মুখ ফিরে যায়।
সেই অস্তিত্ব
কোথায় যেনো একটা তৃপ্তি থাকে,
তার অস্তিত্ব, আমি তারে খুঁজি,
সে আমারে খুঁজে
কোথায় যেনো আমি, আমাকেই দেখেছি,
শুধু আয়নার মতো প্রতিচ্ছবি নয়,
স্বপ্নের মতো আশা, আকাশের মতো ধূয়াশা,
অনুমানের মতো অনেক কিছু নয়,
মনে হয় এইসব পেয়ে যাবো লক্ষে-স্পর্শে-
অনুভূতির কিনারেই কোনোদিন
এই করে প্রতিদিন, প্রতিরাত পর চল্লিশ বছর
মাঝে মাঝে ব্যথাতুর আর ব্যঞ্জনা হলেও
সেই অস্তিত্বই পূণঃবার চোখে ভাসে,
কোথায় যেনো থাকে, কোত্থেকে সে আসে।
ব্যাথা
গোপন ব্যথায় মন তবু খুঁজি স্মৃতির ঘ্রাণ
ফের যদি আসে, যে স্মৃতি বোধে অম্লান
চোখে জল ঝরে, এতো দগ্ধ মনের বাসন
কে কেড়েছে ওরে মন তোর মনের আসন
আসনচ্যূত কোন কক্ষপথ হাতরেছো বারবার
সবারই তো স্মৃতি ব্যাথা দেয় স্মরণে আবার
তীর্থে বেরিয়েছো স্বতীর্থ হয়নি তার কথা ভেবে
কি আমল এমন যে, সে কেউ খরিদে নেবে
যত চারু-যত কারু বোঝার মনে হয় কেউ নেই
সূর্য্য অস্তে কত রঙ ধরে আর তুমি, যেই-সেই।
মিথ্যের পেয়ালা অজান্তেই গিলেছি যা আজ বুঝি
কোন্ ভাষিনীর কাছে সত্য হারিয়ে আবার খুঁজি
এইসব জীবনের বদনাম ভেঙেছে সত্যের শৃঙ্খল
অগ্নির কাছে মোমের পরাজয় এমনই- এক ছল
এখন বিষণ্নতা এঁটে থাকে চোখ আর মনে মনে
এমন দাওয়াই আছে কি? যা সারাবে এই ক্ষণে
কতবার একাকী রেখেছি নিজেকে জানার নেই কেউ
শত সুখেও সেই মিথ্যেকেই- ভুলতে পারি না ভুলেও।
দুপুর এক রাত
কতদিন দেখিনা বাঁশঝাড়
তার-আমার শৈশব- ছায়াদের ভীড়
নীরিবিলি নীড় মাটির দেয়াল
খেয়াল হলেই- চোখে ভাসে
এখনো তুমিহীন- অন্ধের মতো
দুপুরেই রাত নেমে আসে।
স্মৃতি
‘সেদিন’ অনেক দূর চলে গেছে
একটা বিছানার চাঁদরের মতো পূরান
তবু তার রঙ আল্পণা প্রতিদিন চোখে ভাসে
তার ভাঁজ পাখির পালকের মতো
ভিজে গেছে- ম্লাণ
ক্লান্ত কুটিরটার কোণে কোণে মাকড়সার পূরণো জাল
কতগুলো স্মৃতি ধূসর রোমাঞ্চ নিয়ে পাশে পাশে হাসে
সেদিনের আনমনা প্রহর আমার ক্ষান্ত জীবনের মতো
অথবা আত্মাহীন দেহের মতো
আরো কতদিন পরে দূরে সরে মাটি হয়ে গেছে।
অনুভূতি
১.
সকল শরীরে বিষাদ আর ভালোবাসা
আমার চোখ থেকে হলুদ উড়ে যায় ভালোবাসা ওড়ে
কোথাও দূরে অপরিচিত হয়ে মিশে
আরো বহুদিন যায়- বহু মাস- বছর কয়েক পরে
ফাগুনের দিন- স্মৃতি- অনুভূতি- মনে পড়ে।
২.
সারারাত চেয়ে থেকো অন্ধকার
চোখের গহীন কালোর মতো
আর কালো শশির মতো
একটা তারা যদি বেখেয়ালে ছুটে আসে
ছুটে আসে কোনো ট্রেন, হুইসেল
অপরিচিত গন্তব্যে থেমে যেও- একবার।
বিলবোর্ড
বিলবোর্ডে তুমি থাকো
তুমি নাকি রাত-দিন ওভাবেই হাসো
ভালোবাসো সব স্তর এক করে,
বিলবোর্ড থেকে নেমে এসো-
হাসতে হাসতে হেঁটে যাই কিছুদূর।
কারণে বা অকারণে
আবার দেখা হবে হয়তো তোমার-আমার
কাব্যহীন জীবনের কোনো এক ক্ষণে
শেফালী রোদহীন শ্রাবণের ঝিরিমেঘ,
কাশফুল পাখির পালকের মতো ভিজে গেলে
মহাসৃষ্টির আনন্দেও মৃত্যুর হুলিয়া কাঁধে
স্মৃতিভ্রম নির্বাক চোখ- প্রপৌত্রসহ
দেখা হবে ভাবলেশ মনে, কারণে বা অকারণে।
ক্ষত
ধরো তুমি গোলাপ ছুঁলে একটু একটু হাসে
আমি যাকে ছুঁইতে গেলে বিষন্ন সুর ভাসে
হৃদ বেদনা থাকছে না ফের মতে মতান্তরে
হাসির মাঝে গভীর ক্ষত ভাসে ওই আস্তরে
কাছে এসো কাছে বসো তবুও কাছে নও
নিঃশ্বাস যদি নিরুদ্দেশ হয় একটু খবর লও।