রবিবার  ২৬শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ  |  ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ  |  ৩রা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি

মেডিটেশন এবং ইএসপি। শেষ পর্ব

১ম পর্বের পর–

এটা তো হলো গল্প। কিন্তু গল্পের মধ্যে দিয়ে যে সত্যটা বেরিয়ে এসেছে, সেটাই প্রকৃত জ্ঞান। ঈসা(আ:) নবীর (যীষু খৃষ্টের) জন্মের প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে গ্রীক পন্ডিত, দার্শনিক সক্রেটিস বলে গেছেন, “নো দ্যাই সেলফ”। অর্থাৎ নিজেকে জানো।
গ্রীক দাশর্নিক নিজেকে জানার পথ পরিক্রমায় কতটা এগিয়েছিলেন জানি না। কারন তাকে থামিয়ে  দেয়া হয়েছিলো। গ্রীক রাষ্ট্রনায়কের নির্দেশে ‘হেমলক’ নামের এক বিষ পান করে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিলো তাকে। তাই বলে নিজেকে জানার প্রচেষ্টা থেমে থাকে নি। নিজেকে জানার চেষ্টায় অনেক মানুষই তাদের মনকে ধরার চেষ্ঠা করেছেন। বছরের পর বছর নির্জন স্থানে কিংবা পাহাড়ের গুহায় সাধনা করেছেন নিজের মনকে ধরার। কেউ পেরেছেন কেউ পারেন নি। আমরা এদেরকে সাধু, সন্যাসী কিংবা দরবেশ হিসাবেই জেনে এসেছি।

না । আমি আপনাকে এদের কাতারে সামিল হতে বলবো না। বলবো না কোনো নির্জন স্থানে গিয়ে বছরের পর বছর সাধনা বা ধ্যান করতে। আপনাদের জন্য সেই কাজটি করে গেছেন ড.হোঁজে সিলভা। দীর্ঘ প্রায় ৫৭ বছরের গবেষণায় তিনি তৈরী করেছেন মনকে ধরার সহজ এক প্রক্রিয়া। যার নাম সিলভা আল্ট্রা মাইন্ড ইএসপি সিস্টেম। মাত্র তিন তিনের সকাল সন্ধ্যা ট্রেনিং এর মাধ্যমে আপনি শিখে যাবেন মনের কাছে যাবার, মনকে ধরে তাকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া। আপনার ভেতরে বিনাজমান ‘মন’ নামের এই শক্তিকে ব্যবহার করে, আপনি সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে পারবেন আপনার জীবনকে, যেভাবে আপনি চান।

মন যে আপনার আছে তাতে নিশ্চয়ই আপনার কোনো সন্দেহ নাই। এটা আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ, যা দৃশ্যমান নয়। আপনার দৃশ্যমান অঙ্গগুলিকে আপনি নানাভাবে ট্রেনিং দিয়েছেন জন্মের পর থেকে। চোখকে যেমন করে কিছু দেখা, হাতের ব্যবহার, পায়ের ব্যবহার,ঠোট, জিহবা, দাঁত, সব কিছু ব্যবহারে ট্রেনিং নিতে নিতেই আপনি বড় হয়ে আজ এতদুর পর্যন্ত এসেছেন। অথচ সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ, যা দৃশ্যমান নয়, সেই মনকে ব্যবহারের ট্রেনিং আজ পর্যন্ত দেননি। ট্রেনিং যদি না দেন তাহলে সেই মনটাকে আপনি আপানার কাজের সঙ্গে যোগ করবেন অর্থাৎ মনোযোগ দেবেন কি করে! ৫৭ বছরের গবেষণায় ড.হোঁজে সিলভা মনকে ব্যবহার করতে শেখার যে পদ্ধতিটি তৈরী করেছেন তা আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। ইউরোপ, আমেরিকা সহ উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে রয়েছে সিলভা আল্ট্রামাইন্ড ইএসপি সিস্টেম এর হেড কোয়ার্টারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান। সে সব দেশের পাঠ্য সূচীতে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে মন প্রশিক্ষনের বিষয়। আমাদের বাংলাদেশে এর একমাত্র অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ‘এম কিউ মিশন’। এখানে যোগাযোগ করে তিন দিনের ট্রেনিং এর মাধ্যমে আপনি ব্যবহার করতে শিখবেন আপনার মনকে। তাকে কাজে লাগিয়ে নিজের, প্রিয়জনের কিংবা মনবতার উন্নয়নে নিতে পারবেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। নিজেকে জানার প্রক্রিয়ার আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন অনেক দূর।

আরো একটি গল্প শোনাই আপনাকে। এক ছিলেন ভাস্কর। পাথর কেটে মূর্তি বানাতেন, দেখে মানুষ প্রশংসা করতো। একদিন সেই ভাস্কর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে অনেক দূর চলে গেল সে। এক সময় রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে চলে গেল অন্য রাজ্যে। তবুও তার চলার শেষ নাই। এমন ভাবে পেরিয়ে গেল কয়েকটি রাজ্য। এক সময় সে এসে পড়লো অজানা অচেনা হিন্দু রাজার শহরে। তখন পিচ ঢালা সড়ক ছিলনা, রোড ডিভাইডার ছিলনা, কিন’ পথ ছিল। পথ যখন ছিলো তখন পথের মোড় ছিল। ওই শহরের এমনই এক চার রাস্তার মোড়ে এক বড় পাথর খন্ড দেখতে পেল ভাস্কর। কাছে গিয়ে পাথর দেখে সে বুঝতে পারলো এটা দিয়ে খুব ভালো মূর্তি বানানো যাবে।  ভাস্কর ওই পাথরের মালিককে খুঁজতে লাগলো। কেউ জানে না, সবাই জন্মের পর থেকেই ওই পাথরটি দেখে আসছে। ভাস্কর গেল শহর কর্তৃপক্ষের কাছে। তারাও এর মালিক নন। অবশেষে ভাস্কর গেল রাজার কাছে। রাজা ছিলেন শিবের ভক্ত। ভাস্করের আবেদন শুনে তিনি বললেন, শিবের মূর্তি বানিয়ে দিতে। যদি শিবমূর্তি তার পছন্দ হয় তাহলে তিনি ভাস্করকে এক লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক দিবেন বলেও জানালেন। তবে শর্ত দিলেন মূর্তি বানানোর সময় পথচারীদের পথ চলার কোন বিগ্ন ঘটানো যাবেনা। ভাস্কর তাতে রাজী হয়ে গেল। প্রতিরাতেই ভাস্কর পাথর কেটে শিবমূর্তি বানাতে শুরু করলো। লোকজন চলাচল শুরু হবার আগেই বড় একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখে। সন্ধার পর আবার শুরু হয় তার কাজ। ভাস্কর মূর্তি বানানোর সময় এমন ভাবে পাথর কাটলেন যেন উপর দিয়ে একটি ছাউনি তৈরি হয়। তাতে এমন ভাবে ছিদ্র করলেন যাতে সূর্য্যের আলো  সেই শিবমূর্তির কপালে এসে পড়ে। অনেক দিন পর তার শিবমূর্তির বানানোর কাজ শেষ হলো। রাজা জানলেন। দিনক্ষন দেখে মূর্তি উন্মোচনে সময় নির্ধারিত করলেন। সময়টা ছিল ভোরে সূর্য ওঠার পর। নির্ধারিত সময়ে রাজা তার সভাসদদের নিয়ে হাজির হলেন চার রাস্তার মোড়ে। সূর্যদয়ের পর মূর্তি উন্মোচিত হলো। সকালের সূর্যের আলো ছাউনির ছিদ্র দিয়ে পড়লো শিবের কপালে । শিবকে বলা হয় ত্রিলোচন। তৃতীয় নয়ন ছিলো তার। ভোরের সূর্য্যের আলো ছাউনির ছিদ্র পথে শিবের কপালে পড়ায় রাজা যেন জ্যান্ত শিবকেই দেখতে পেলেন। অভিভূত হয়ে রাজা কেঁদে ফেললেন। একসময় নিজেকে সামলে নিয়ে রাজা ভাস্করকে বললেন, এক লক্ষ নয় তার চেয়েও অনেক বেশি গুন টাকা দিতে চান তিনি। ভাস্করকে তার খুশি মত চাইতে বললেন। ভাস্কর জানালেন তিনি কিছুই চান না। তার মূর্তি দেখে কেউ কাদঁতে পারে এটাই সে সবচেয়ে বড় পাওয়া মনে করে। রাজা ভাস্করকে প্রাসাদে নিয়ে গেলেন। তার সঙ্গে থাকার অনুরোধ করলেন। ভাস্কর রাজী হলেন। রাজার সঙ্গে রাজপ্রাসাদেই অতিথি হিসেবে থাকতে লাগলেন ভাস্কর। খুব অল্প সময়েই দুজন দুজনের বন্ধু হয়ে গেলেন। একদিন গল্প করতে করতে রাজা প্রশ্ন করলেন ভাস্করকে, এত সুন্দর শিবমূর্তি তুমি বানালে কি করে? ভাস্কর জানালো খুবই সহজ। রাজা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন কি রকম?

ভাস্কর হেসে জানালো, শিব অর্থাৎ সুন্দর। ওই পাথরটির মাঝে লুকিয়ে থাকা সুন্দরকে আমি দেখে ছিলাম। তারপর অসুন্দর যা কিছু ছিল তা কেটে ছেটে ফেলে দিয়েছি।

আপনিও সুন্দর। সদা সর্বদা আপনার ভেতর সুন্দর বিরাজমান। আপনার চারপাশের এবং বিচরণ ক্ষেত্রের পরিবেশ, পরিসি’তি, আপনার চাহিদায় নানা রকম অসুন্দর এসে আপনার ভেতরের সুন্দরকে ঢেকে ফেলেছে। আপনার মন, আপনার জীব আত্মা, আপনার পরমাত্মা এর কোনটাই কিন’ আপনি নন। সবই আপনার। আপনি সব সময়ই সত্য। সব সময় সুন্দর। আপনি আপনার চারপাশের অসুন্দরকে ছেটে ফেললেই আপনি নিজেকে চিনতে পারবেন। সৃষ্টিকর্তা, যিনি সব সময়ই সত্য এবং সুন্দর, তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়ে যাবে আপনার। নিজেকে জানার জন্য, সকল অসুন্দরকে ছেটে ফেলার জন্য প্রথমেই ধরতে হবে আপনার মনকে।

সুন্দর থাকুুন। সুস্থ থাকুন।
জীবনের বাকী সময়টুকু হোক আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। 11081147_10202940525869170_7147810063537569820_n

লেখক:  সৈয়দ হারুন

লেখক: সৈয়দ হারুন

লেখক:
সৈয়দ হারুন,
প্রশিক্ষক, সিলভা আল্ট্রামাইন্ড ইএসপি সিস্টেম

www:silvaultramind.com

mail: [email protected]

fb: mqmission

 

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com