বুধবার  ২৯শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ  |  ১৫ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ  |  ৬ই রমজান, ১৪৪৪ হিজরি

মিশরে প্রাচীন কবর খুঁড়ে পাওয়া গেল সোনার পাতে মোড়া মমি

মিশরে পুরাতত্ত্ববিদরা সাক্কারায় এমন একটি মমি খুঁজে পেয়েছেন যা সোনার পাত দিয়ে মোড়া এবং চার হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। রাজধানী কায়রোর দক্ষিণে সাক্কারায় একটি প্রাচীন কবরস্থানে মাটির ৫০ ফুট নিচে এটি পাওয়া যায়।

সবচে বড় যে মমিটি পাওয়া যায় তা ‘খনুমদিয়েদেফ’ নামে এক ব্যক্তির। যিনি ছিলেন একজন পুরোহিত, পরিদর্শক ও অভিজাতদের তত্ত্বাবধানকারী।  অন্য আরেকটি মমি ‘মেরি’ নামে এক ব্যক্তির। যিনি ছিলেন প্রাসাদের একজন কর্মকর্তা যাকে ‘গোপন রক্ষক’ উপাধি দেয়া হয়েছিল।

যে শবাধারে মমিটি রাখা ছিল তা গত ৪ হাজার ৩০০ বছরে কখনো খোলা হয়নি।যে শবাধারে মমিটি রাখা ছিল তা গত ৪ হাজার ৩০০ বছরে কখনো খোলা হয়নি।

এ পদবী পাবার ফলে তার বিশেষ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলো করার অধিকার ছিল। তৃতীয় কবরটিতে সমাহিত করা হয়েছিল ‘ফেটেক’ নামে একজন বিচারক ও লেখককে। এখানে বেশ কিছু মূর্তি পাওয়া গেছে যা ওই এলাকায় পাওয়া মূর্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারের।

এছাড়া মৃৎপাত্রসহ আরো নানা জিনিস পাওয়া গিয়েছে ওই কবরগুলো থেকে। মিশরের সাবেক প্রত্নসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী ও পুরাতত্ত্ববিদ জাহী হাওয়াস জানিয়েছেন, নতুন পাওয়া এই মমি ও অন্যান্য সামগ্রীর সবই খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৫তম থেকে ২২তম শতাব্দীর সময়কালের।

 মিশরের সাবেক প্রত্নসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী ও পুরাতত্ত্ববিদ জাহী হাওয়াস মিশরের সাবেক প্রত্নসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী ও পুরাতত্ত্ববিদ জাহী হাওয়াস

এই খনন কাজের সঙ্গে জড়িত আরেকজন পুরাতত্ত্ববিদ আলি আবু দেশিশ জানান, এ আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে তখনকার রাজাদের আশপাশে থাকা লোকদের সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

কায়রোর নিকটবর্তী সাক্কারা নামের জায়গাটি তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি সমাধিক্ষেত্র হিসেবে চালু ছিল। ইউনেস্কো এই জায়গাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান বলে ঘোষণা করেছে। এখানেই একসময় মিশরের প্রাচীন রাজধানী মেম্ফিস নগরী অবস্থিত ছিল।

কায়রোর নিকটবর্তী সাক্কারা নামের জায়গাটি তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি সমাধিক্ষেত্র হিসেবে চালু ছিল।কায়রোর নিকটবর্তী সাক্কারা নামের জায়গাটি তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি সমাধিক্ষেত্র হিসেবে চালু ছিল।

কিছু সমালোচক অভিযোগ করেছেন যে মিশরের সরকার পর্যটক বাড়ানোর জন্য একাডেমিক গবেষণার পরিবর্তে মিডিয়ায় প্রচার পায় এমন আবিষ্কারগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বিশ্বজুড়ে সংবাদ মাধ্যমে আমেরিকা থেকে ‘সবুজ কফিন’ মিশরে ফেরত যাবার খবরটি ব্যাপক প্রচার পায়।

খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৪ থেকে ৩৩২ সাল পর্যন্ত মিশরে যে রাজবংশ রাজত্ব করেছিল, সাড়ে নয় ফুট লম্বা সবুজ এই কফিনটি সেই সময়ের। এতে একদা শায়িত ছিলেন ‘আখেনমাট’ নামে একজন পুরোহিত। কফিনটির মূল্য ১০ লাখ ডলারেরও বেশি বলে ধরা হয়।

জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বিশ্বজুড়ে সংবাদ মাধ্যমে আমেরিকা থেকে 'সবুজ কফিন' মিশরে ফেরত যাবার খবরটি ব্যাপক প্রচার পায়।

উত্তর মিশরের আবু সির নেক্রোপলিস থেকে একটি পাচারকারী চক্র এটিকে চুরি করেছিল এবং তার পর ২০০৮ সালে এটি জার্মানি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়। এরপর ২০১৩ সালে একজন সংগ্রাহক এটিকে হিউস্টন মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল আর্টস কে প্রদর্শনের জন্য ধার দেন।

পরে এটি নিয়ে কয়েক বছর ধরে মামলা চলার পর যুক্তরাষ্ট্র এটি মিশরকে ফেরত দেয় এ বছর ২ জানুয়ারি। এর আগে ২০১৯ সালে ‘সোনালি কফিন’ বলে পরিচিত পাওয়া প্রায় ২ হাজার ১০০ বছরের পুরোনো আরো একটি পাচার হওয়া শবাধার মিশরকে ফেরত দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

২০১৯ সালে 'সোনালি কফিন' বলে পরিচিত পাওয়া প্রায় ২ হাজার ১০০ বছরের পুরোনো আরো একটি পাচার হওয়া শবাধার মিশরকে ফেরত দেয় যুক্তরাষ্ট্র। 

নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট এটি ৪০ লাখ ডলারে কিনেছিল। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় আরো কিছু দেশ সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী মিশরকে ফেরত দিয়েছে। ২০২১ সালে ইসরায়েল মোট ৯৫টি প্রত্নসামগ্রী  মিশরকে ফেরত দেয়।

সেগুলো নানা পথে ইসরায়েলে পাচার হবার পর জেরুসালেমে বিক্রি করা হচ্ছে বলে ধরা পড়েছিল। সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও ঘোষণা করেছে, তারা একটি সারকোফেগাস বা শবাধার, মমি ও কিছু পাত্র মিশরকে ফেরত দেবে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com