দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি আর করোনা সংক্রমণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন এখন অনেকটাই বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে এসেছে ঈদুল আজহা। ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু এবার দ্রব্যমূল্য ও করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ঈদ উদযাপনের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে মানুষ। ঈদের পরে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। ঈদের প্রস্ত্ততি, কেমন কাটবে ঈদ—এসব বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর—
করোনা সংক্রমণের ভয় ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকেই ব্যয় কাটছাঁট করে কোনোরকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। অনেকের মনেই এই আশঙ্কা রয়েছে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। বগুড়ার নিশিন্দারা উপশহর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী তানবীর সুলতানা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ঈদ নিয়ে কী ভাবছেন। তিনি বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের আর ঈদ। দিনে দিনে বেড়েই চলেছে পণ্যের দাম। খরচ বাড়লেও বাড়েনি আয়। সংসারের এই টানাপোড়নে ভবিষ্যৎ কী হবে এই চিন্তায় আছি। এমনিতে করোনায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। মনে হয়েছে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠব। কিন্তু তা আর হচ্ছে কোথায়। শহরের চকলোকমান এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী তাসমিনা বেগম বলেন, গ্যাস, ভোজ্য তেলসহ অনেক পণ্যের দাম বাড়ছেই। তাই ঈদের খরচও কমাতে হয়েছে।
পিরোজপুর অফিস: পিরোজপুরের পাঁচপাড়া বাজারে কোরবানির গরু কিনতে যাওয়া আইনজীবী রেজাউল ইসলাম শামীম ও তার বড় ভাই সরকারি চাকরিজীবী শহীদুল ইসলাম জসিম বলেন, দ্রব্যমূল্যের চাপে মধ্যবিত্ত অনেকটা কোণঠাসা। এর মধ্যেই ঈদুল আজহার খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত কোরবানিতে তাদের পরিবার যে গরু ৮০ হাজার টাকায় কিনেছেন এ বছর সেই গরু ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাচ্ছে। শহরের নড়াইলপাড়ার কাঠ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান প্রতি বছর ভাগে গরু কোরবানি দেন। গত বছর যে গরু ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছিলেন সেই ধরনের একটি গরুর দাম এবার ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ওঠায় না কিনেই ফিরে এসেছেন। তারপরও যে দামেই হোক না কেন গরু তো কিনতে হবে। একমাত্র মেয়ে ছোটবেলা থেকেই দেখছে বাবা প্রতি বছর কোরবানি দেন। অন্তত মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে হলেও কোরবানি দিতে হবে—গরুর দাম যাই হোক না কেন।
খুলনা অফিস: নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডের গৃহবধূ রোমানা আক্তার বলেন, সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ঈদের বাজার কাটছাঁট করতে হয়েছে। মুন্সীপাড়া এলাকার মুজিবুর রহমান বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই। সে কারণে পাঁচ জনে মিলে এবার কোরবানি দিচ্ছি। বয়রা মদিনাবাগ এলাকার ইজিবাইক চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, কোরবানি দেব, তার টাকা কই? ঈদের দিন এক-দেড় কেজি গরুর মাংস কেনার ইচ্ছে আছে। তাই দিয়েই হবে আমাদের ঈদ।