গত বছরের সারাটা সময় জুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশের অর্থনীতিতে গতি ছিল না। করোনাকালিন সংকটে অনেকের আয়-রোজগার কমেছে। এমন পরিস্থিতিতেও চলতি করবর্ষের ডিসেম্বর পর্যন্ত গতবারের একই সময়ের তুলনায় রিটার্ন জমা ও আয়কর আদায় বেশি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
চলতি (২০২০-২০২১) অর্থবছরে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। চলতি করবর্ষে জরিমানা ছাড়া রিটার্ন জমার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। করোনাকালিন সংকট বিবেচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সময় বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করে। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছে। যা গত অর্থবছর একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা বেশি।
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণে দেশে ব্যবসা বাণিজ্য ভাল ছিল না। শিল্পখাতে মন্দা ছিল। অনেকের আয় কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতেও আমাদের সম্মাণিত করদাতারা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। তারা আয়কর পরিশোধ করেছেন। এবারে রিটার্ন জমা ও আয়কর পরিশোধে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এদেশে কর পরিশোধের সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অনেক করদাতা কর পরিশোধকে অত্যন্ত জরুরী বিষয় মনে করেন। বিশেষভাবে তরুণ করদাতারা কর পরিশোধে অত্যন্ত আগ্রহী।
গত বছরের শুরু থেকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়। এতে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য শিল্পখাতে গতি কমে। বছরের মাঝামাঝি করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে। এতে অর্থনীতির স্থবিরতা কাটতে শুরু করে। তবে তা স্থায়ী হয় না। বছরের শেষভাগে আবারো করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাটাই করা হয়। অনেকের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়। বছর জুড়ে করোনার প্রত্যক্ষ পরোক্ষ প্রভাবে অনেকের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় অনেকে নিয়মিত কর পরিশোধ করতে হিমশিম খায়। গত অর্থবছরের শেষ হিসাবে রাজস্ব আদায়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি ছিল। এবারে করোনা সংক্রমণরোধে জাতীয় আয়কর মেলা স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে একটি কর অঞ্চল ছাড়া অন্য কোনো কর অঞ্চলে অনলাইনে রিটার্ন জমার সুযোগ ছিল না।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এদেশে রাজস্ব আদায় সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এর প্রমাণ করোনার মধ্যেও রিটার্ন জমা ও কর আদায় বেড়েছে।