করোনাভাইরাসের টিকার জন্য বাংলাদেশের অধীর অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। ইতিমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে ২০ লাখ ডোজ টিকা। ১৬৭টি বক্সে ভারত সরকারের উপহারের টিকাবাহী এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইট বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরে টিকার চালান গ্রহণ করার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।
এর আগে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছিলেন- আগামী ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি ২৫ জনকে করোনার টিকা দিয়ে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। এই ২৫ জন হবেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এই টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হতে পারে।
তিনি জানান, এরপর ৪০০-৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করার পর ৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকা কার্যক্রম শুরু হতে পারে। কুর্মিটোলা, কুয়েত মৈত্রী, মুগদা ঢাকা মেডিক্যালের স্বাস্থ্যকর্মীদের পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হবে। কোনো বেসরকারি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে না।
স্বাস্থ্যসচিব বলেন, সরকারি হাসপাতালের বাইরে কোনো টিকা কেন্দ্র থাকবে না। সার্বিক কার্যক্রম সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে কেনা ৫০ লাখ ও উপহারের ২০ লাখ ডোজের মধ্য থেকে। দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। ফেব্রুয়ারিতে যারা টিকার প্রথম ডোজ নেবেন তারা এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ পাবেন।
সরকারের খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে পর্যায়ক্রমে করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় আনা হবে। তিন পর্যায়ের পাঁচটি ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার মানুষকে টিকা প্রদান করা হবে।
প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট জনগোষ্ঠীর ৩ শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এই তিন শতাংশের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স এবং মিডওয়াইফারি পেশায় নিয়োজিত কর্মী, মেডিক্যাল ও প্যাথলজি ল্যাব কর্মী, পেশাদার স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সাইকোথেরাপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা, মেডিসিন পারসনেল, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্সচালক মিলে তিন লাখ ৩২ হাজার জন।
সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, যারা স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ধাপে কাজ করলেও সরাসরি কভিড-১৯ মোকাবেলার সঙ্গে যুক্ত নন, যেমন- স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কর্মী, বাণিজ্যকর্মী, ক্লারিক, লন্ড্রিকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্সের পাশাপাশি অন্যান্য গাড়িচালক- এমন এক লাখ ২০ হাজারজনকে টিকা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া দুই লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, পাঁচ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি ফ্রন্ট লাইনে কাজ করা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার,-ভিডিপিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ডের তিন লাখ ৬০ হাজার সদস্য, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ৫০ হাজার কর্মকর্তা, ফ্রন্ট লাইনে কাজ করা সাংবাদিক, মিডিয়াকর্মী ৫০ হাজারজনকে টিকার আওতায় আনা হবে।
এর বাইরে এই ধাপে জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী, ধর্মীয় নেতা, দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত কর্মী, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী শ্রমিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মী, ব্যাংককর্মী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন রোগী, রোহিঙ্গা, বাফার, জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মীরা টিকার আওতায় আসবেন।
প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে টিকা দেওয়া হবে ৬০ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়স্ক নাগরিকদের। এই ধাপে ৭ শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকা পাবেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি ধাপে ১১ থেকে ২০ শতাংশ বা এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ টিকা পাবেন। এই পর্যায়ে ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নাগরিক, বয়স্ক এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা মানুষ, শিক্ষক, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মী, প্রথম পর্যায়ে বাদ পড়া গণমাধ্যমকর্মী, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী মানুষ, আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য, গণপরিবহনকর্মী, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ওষুধের দোকানের কর্মী, গার্মেন্টস শ্রমিক, যৌনকর্মী ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা টিকার আওতায় আসবেন।
তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ থেকে ৪০ শতাংশ বা তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১ থেকে ৫০ শতাংশ বা ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।
তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেওয়া হবে দ্বিতীয় ধাপে যারা টিকা পাননি এমন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, প্রসূতি, অন্যান্য সরকারি কর্মচারী, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী কর্মী, অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী, রপ্তানিকারক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মী, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দরকর্মী, কয়েদি ও জেলকর্মী, শহরের বস্তিবাসী বা ভাসমান জনগোষ্ঠী, কৃষি ও খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মী, ডরমিটরির বাসিন্দা, গৃহহীন জনগোষ্ঠী, অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মী, বাদ পড়া গণপরিবহন কর্মী, বাদ পড়া ৫০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নাগরিক, জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মীরা।
তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ সর্বশেষ ধাপে টিকা পাবেন বাদ পড়া যুব জনগোষ্ঠী, শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থী এবং আগের বাদ পড়া সব জনগোষ্ঠী।